নিউজ ডেস্ক, সিটিজিবার্তা২৪ডটকম
শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একটি বিস্ময়ের নাম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আর এ নিয়ে চলছে নানা কৌতূহল ও বিচার বিশ্লেষন।
ঢাকার লাইম লাইটের ‘রাজনীতিতে না থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন অনেক দিন ধরেই। তাই দলের এত বড় পদে আসাটা নিজের কাছেও চমক মানলেও অপ্রত্যাশিত মনে করছেন না নওফেল’।
নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সদস্য ছিলাম। সেই কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এছাড়াও একই সময় থেকেই আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগেরও সদস্য।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাতেই ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মত দেশের সর্বপ্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠনের নীতি নির্ধারনী কেন্দ্রীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড’।
১৯৯৪ সাল থেকে টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তারা বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী। তবে অনেকটা হঠাৎ করেই এমন গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ পাওয়াটাকে মহিবুল ভাবছেন তৃণমূলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পুরস্কার হিসেবে।
তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের রাজনীতি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছি। তৃণমূলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিদের্শে কাজ করার জন্যেই এই মূল্যায়ন।’
উচ্চশিক্ষিত এই তরুন আইনজীবীর দলে অন্তভুক্ত হওয়ার ঘটনাকে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হিসাবে মনে করছেন।
অনেকে মনে করছেন পেশী শক্তির বিপরীতে মেধা ও তারুন্য নির্ভর সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রতিষ্টা করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর।
যার বহি:প্রকাশ হিসাবে ব্যারিষ্টার নওফেলের মত উচ্চশিক্ষিত তরুনদের দলের মূল সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত করছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আসীন থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর জৈষ্ঠ পূত্র ব্যারিষ্টার নওফেলের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি এবং অঢেল আস্থা ও বিশ্বাসের নেপথ্যের কারন খুঁজছে এই মূহুত্বে দেশের রাজনৈতিক নেতা কর্মী এবং বিশ্লেষকরা।
১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার নওফেল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দুই দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর আংশিক নাম ঘোষণা করে।
এবারের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দুই নতুন মুখের একজন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অন্যজন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক শামীম।
তবে, ‘মহিবুলের অন্তর্ভুক্তি অনেকের কাছে বিস্ময়ের মনে হয়েছে। দলের বড় অংশের কাছে তার নামটাও অপরিচিত ছিল। এমনকি কমিটি ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুধু নাম পড়ে গেলেও তার ক্ষেত্রে বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেন।
সাধারণ মানুষ তখনই জানতে পারেন, “চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল”।
সূত্রমতে, পিতা এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর নির্বাচনে অদৃশ্য শক্তি হিসাবে কাজ করে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সুনজর অর্জন করেছিলেন ব্যারিষ্টার নওফেল।
নির্বাচনী প্রচারনায় জনসম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে অধিক জোর দিয়ে বিএনপি শাসনামলে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে চসিক পরিচালনায় পিতা মহিউদ্দীনের পেছনে শক্তি যুগাতেন তিনি।
জনগনের মন জয়ের উদ্দেশ্য চসিককে জনবান্ধব ও জনকল্যানকর কাজের ধারনা দিয়ে নিরবে নিভৃতে কাজ করে গিয়েছিলেন এই তরুন আওয়ামী লীগ নেতা।
আর এই বিষয়গুলো ‘সেসময় থেকে দলীয় সভানেত্রীর নজরে ছিল যা বর্তমানে মহিবুল হাসান নওফেলের সাংগঠনিক পদে মূল্যায়নের নেপথ্যে কাজ করেছে’ বলে মনে করেন অনেকে।
পরবর্তীতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে পারষ্পরিক সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে পেশীশক্তির রাজনীতিতে চরম অনিহা থাকা তরুন এই নেতার বিভিন্ন গুনাবলী প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়।
এরমধ্যে বিগত চসিক নির্বাচনে পিতা মহিউদ্দীন চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় নেতা কর্মীদের চরম অসন্তোষের ঘটনায় দলীয় হাইকমান্ড বিব্রত হলে ডাক পড়ে ব্যারিষ্টার নওফেলের।
দলীয় এসাইনমেন্ট পেয়ে চট্টগ্রামে এসে নিজের বাবার রাজনৈতিক বলয়ের নেতা কর্মী সহচরদের অভিমান ভাঙিয়ে নির্বাচনমুখী করার কাজেও সফলতা পেয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ যুবলীগ নগর কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে ও সাংগঠনিক কাজের পরামর্শক হিসাবে সবসময় পর্দার আড়ালে ভূমিকা রাখতেন ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান নওফেল।
বিদেশ থেকে গ্রহণ করা উচ্চশিক্ষা ও লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা মহিবুলের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি ১/১১ সময়কালীন লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশী আইনজীবী ও অর্থনীতিবীদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরীর ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে অবগত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী এমনটা মনে করছেন অনেকে।
সদা হাস্যউজ্জল, সাদাসিধে জীবন চরিত্রের অধিকারী এই তরুন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে আগামী নির্বাচনে দেশের ৬০ ভাগ তরুন প্রজন্মের ভোটারকে আকৃষ্ট করার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করার নিমিত্তে মূলত সংগঠনের দায়িত্বে আনা হয়েছে বলে, ইঙ্গিত মিলেছিল জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তৃতায়।
এমনটা বলছেন তরুন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, ২ দিনের জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজ দলকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার উদ্দেশ্যে দেশের তরুনদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের আহবান করতে দেখা গিয়েছিল।
সম্মেলনে তরুন মেধাবী সৎ নেতৃত্বের সমন্বয়ে নির্বাচনে জয়লাভের উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কমিটিতে পদ পদবী বন্টনের কথাও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই দিক বিবেচনায় পারিবারিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার চারদেয়ালের মধ্যে বেড়ে উঠা ব্যারিষ্টার নওফেলকে, ‘নির্লোভ চরিত্র ও ইতিবাচক রাজনৈতিক ধ্যান ধারনা ও দলীয় আদর্শিক চিন্তা চেতনায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে দলের ইয়াং/ট্যালেন্ট হান্টার হিসাবে চট্টগ্রামের মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের জাতীয় রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ হয়েছে বলছেন দলীয় নেতাকর্মীরা’।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মন্তব্য করেছেন, ‘তৃণমূলের রাজনীতি এবং তৃণমূল থেকে নির্বাচনে দলকে বারবার জয় এনে দেওয়ার পুরস্কার হচ্ছে আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রাপ্তি। যেহেতু আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির মূল লক্ষ্য আগামীর নির্বাচন তাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাকে মূল্যায়ন করেছে।’
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে যে, ‘অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে তা বিবেচনায় সংগঠনে বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যাক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করার অতীত ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও পেশাজীবিদের মূল্যায়ন করতে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠনটিকে’।
“ঢাকা বারের আইনজীবী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন”।
এছাড়াও ‘তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বিদেশী প্রতিষ্টানের বিপক্ষে দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের আইনী কৌশলী হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করছেন ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল’।





