Thursday,30 August 2018
ctgbarta24.com
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার মূর্তিমান আতংক ছিল হাজারী। বলা হত পুরা এলাকাজুড়ে হাজারীর শাসন ছিল। সিএমপি শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল তার নাম। খুব অল্প বয়সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়া, জনসাধারণ সবদিকে আলোচিত ছিল সে। নাম তার আরমান হাফিজ। ঘটনাচক্রে বনে যায় আরমান হাজারী।
শমসের পাড়া, চন্দ্রিমা আবাসিক, চান্দগাঁও আবাসিক, চান্দমিয়া আবাসিক এসব এলাকাজুড়ে ছিল তার বিচরণ। তবে তার স্টাইল ছিল খুব উগ্র ও ভয়াবহ। যায় বলতো, তাই ঘটাতো। যখন যাকে খুশি তুলে নিয়ে যেত, টর্চার করা হত। কেউ অবৈধ কাজ করছে, তাকে দিতে হবে চাঁদা।
যত বড় ক্ষমতাধর হোক, তাকে ম্যানেজ না করে কোন জমিতে এক ইঞ্চি কাজ করা সম্ভব হতনা। আর দাবিকৃত টাকা বা ডিমান্ড পূরণ না হলেই শুরু হত ভয়াবহ তাণ্ডব। বাড়ীতে গাড়ীতে পেট্রোল দিয়ে আগুন, যাকে তাকে গুলি করা, তুলে নিয়ে মারধর এসব ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এইভাবে চলে অন্তত পাঁচ বছর।
তার ছিল নিজস্ব বিশাল বাহিনী। তাদের হাতেও ছিল অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। যেখানে যেত, তার আসার আগেই প্রোটকল টিম হাজির হত। কখন কোন এলাকায় ডুকবে তা আগাম কারো বুঝার উপাই ছিল না। প্রতিদিন কোন না কোন ঘটনা ঘটাতো। পুলিশও তার খোঁজে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু সেও এলাকার ভেতর অস্ত্রসস্ত্রসহ বেহাল ভাবে চলাফেরা করতো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার কোন ছবি পর্যন্ত ছিল না, তার খোঁজে এলাকায় ডুকলে অনেকবার পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। পুলিশের গাড়ীতে গুলি করে আসামী ছিনিয়ে নেওয়া এসব ঘটনা মনে হবে কোন সিনেমার শুটিং। কিন্তু না, বাস্তবেই ছিল হাজারীর এসব চিত্র।
এলাকাবাসী জানান, আরমান হাজারী একসময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও পারিবারিক অভাব অনটনে একপর্যায়ে আবির্ভাব ঘটে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে। পরে তাকে বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ খান ও সরোয়ারের অনুসারী বলা হত।
কিন্তু তার নিজেরই ছিল বিশাল এলাকাজুড়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী। অবশেষে, ২০১৫ সালে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আরমান হাজারী। সেই সময় অন্তত অর্ধশত মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। যার অধিকাংশ মামলা হত্যা, গুলি বর্ষণ, পুলিশের উপর হামলা, নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা আদায়ের জন্য ববর্বরতা ইত্যাদি।
অবশেষে, তার মৃত্যুতে ভেঙে যায় তার পুরো সাম্রাজ্য। কেউ জেলে, কেউ পলাতক হয়ে যায়। স্বস্তি ফিরে আসে এলাকাজুড়ে। কিন্তু সম্প্রতি তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা আবারো এই বাহিনীকে গড়ে তুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সবাইকে ফের একত্রিত করা হচ্ছে।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আরমান হাজারীর তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যে বার্ষিকী পালনের কথা বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে হাজার থেকে লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় আবারো আতংক সৃষ্টি করতে দেশ বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাথেও যোগাযোগ করছে হাজারীর অনুসারীরা। তারা চাই পুনরায় আগের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ।
এর জন্য বিভিন্ন এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীদের একত্রিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে গরীব ও এতিম কম বয়সী ছেলেদের দিয়ে গড়ে তুলা হচ্ছে পুরা গ্রুপটিকে আবার। এই খবর বাতাসে যত ছড়িয়ে পড়ছে, জনমনে ভীতি ও গুঞ্জন তত বাড়ছে। এদের সক্রিয় করার পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলের ক্ষমতাধর নেতার আশীর্বাদ পাচ্ছে বলে জানা গেছে। টার্গেট আসন্ন নির্বাচন ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলা।
তবে মূলত কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্তরালে কারা কলকাঠি নাড়ছে তা এখনো নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারছেন না। জনসাধারণ এখনো মৃত আরমান হাজারীর নাম শুনলেই আতংকিত হয়ে উঠে। আবার যদি সেই পূর্বে অবস্থা ফিরে আসে, ভীতির মধ্যে জীবনযাপন করবে হাজারো এলাকাবাসী।




