র্যাবের অভিযানে ১০ লক্ষ জাল রুপীসহ আটক ২

Thursday,28 Dec 2017

Ctgbarta24.com

বিশেষ সংবাদদাতা : র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে ভারতীয় জাল রুপী তৈরীর কারখানা হতে ১০ লক্ষ জাল রুপীসহ ০২ জনকে গ্রেফতার এবং ভারতীয় জাল রুপী তৈরীর বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে যে, সাম্প্রতিক সময়ে একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশী বিদেশী অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরী করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনাপূর্বক অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছে।রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ চক্র দেশী বিদেশী জাল মুদ্রা তৈরী করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় জাল মুদ্রা সরবরাহ করে আসছে। উপরোক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই এর জন্য র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ২৮ ডিসেম্বর ৩ টার  সময় রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা উত্তরপাড়া, বি-ব্লক, বাড়ী নং-২৩, ৩য় তলায় অভিযান পরিচালনা করে।

এ সময় র‌্যাবের আভিযানিক দল উক্ত বাসার একটি কক্ষ হতে ভারতীয় জাল রুপী তৈরীর বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ চক্রের মূলহোতা লিয়াকত আলী (৩৫), পিতা-ইমান উদ্দিন, গ্রাম-ছিটাবাড়ী, পোষ্ট-নাটইখালী, থানা-কচুয়া, জেলা-বাগেরহাট, বর্তমানে বাড়ী নং ২৩, ব্লক বি, থানা-দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামী লিয়াকত আলীর তথ্য মতে, রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা হতে তার অন্যতম সহযোগী আসামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০), পিতা-মৃত আব্দুর গফুর শিকদার, সাং-১নং ওয়ার্ড, শিকদার বাড়ী, রঘুনাথপুর, পোষ্ট-শেখমাটিয়া, থানা-নজিরপুর, জেলা-পিরোজপুরকে গ্রেফতার করে।

​প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী লিয়াকত আলী জানায়, সে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ অবৈধ দেশি বিদেশী জাল মুদ্রা তৈরী এবং জাল মুদ্রার বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত। মূলত রাজধানীর মিরপুর এলাকার ছগির মাষ্টার নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে লিয়াকত এব্যাপারে দীক্ষা গ্রহণ করে। লিয়াকতের গুরু ছগির মাষ্টার ১৯৯৬ সালে শেয়ার বাজার ধসের পর আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে ছগির মাষ্টার তার নেতৃত্বে দেশী বিদেশী অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরীর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এসময় লিয়াকত আলী ছগির মাষ্টারের সহযোগী (সরবরাহকারী) হিসেবে কাজ করত। বিগত ১০ বছর যাবৎ আসামী লিয়াকত নিজেই অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরীর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সে মূলত তার বাসায় অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরী করত এবং তার সহযোগী দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় জাল মুদ্রা সরবরাহ করত।

লিয়াকত প্রতি বান্ডেল ভারতীয় মুদ্রা (প্রতি বান্ডেলে ১ লক্ষ ভারতীয় রুপী) বাংলাদেশী ১২ হাজার টাকায় তার সরবরাহকারীদের কাছে বিক্রি করত। পরবর্তীতে তার সরবরাহকারীরা তাদের স্থানীয় দালালদের দিয়ে রাজধানী ঢাকার মানি এক্সচেঞ্জসহ সীমান্তবর্তী জেলায় বাজারজাত করত। বাংলাদেশী জাল মুদ্রা স্থানীয় বাজারে বাজারজাতকরণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় সে ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরীতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। ইতিপূর্বে আসামী লিয়াকত অবৈধভাবে জাল মুদ্রা তৈরী এবং বাজারজাত করার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কর্তৃক একাধিকবার ধৃত হয়েছে এবং এসংক্রান্তে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামে ০৫টি পৃথক মামলা রয়েছে। তার অন্যতম সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরীর কাজে ব্যবহৃত উন্নতমানের বিদেশী প্রিন্টারের রংগীন কালি এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করত।

এসময় র্যাব ​তাদের নিকট হতে ভারতীয় জাল ১০ লক্ষ রুপী, ভারতীয় জাল রুপী তৈরীর কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ ০১টি, ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবহৃত স্কীন ডাইস ০৬টি, ডাইস প্লেট ০২টি, স্ক্যানার কাম প্রিন্টার ০২টি, প্রিন্টার ০৪টি, ভারতীয় জাল রুপীর নিরাপত্তা সুতা ০৭ বান্ডেল, ফয়েল মেশিন ০১টি, জাল রুপী কাটার কাজে ব্যবহৃত কাটার মেশিন ০৪টি, কাটার ব্লেড ০৭ বক্স, জাল রুপী ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত স্কীন রাবার ০৫টি, জাল রুপী ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত বিদেশী উন্নতমানের রঙিন কালী ১২০টি, অন্যান্য কালী ০৭ কৌটা, জাল টাকা তৈরীর কাজে ব্যবহৃত সাদা রং ১ লিটার, কাচ ০৩ পিস, সুপার গ্লু ০১টি, রুপী বান্ডেল করার রাবার ০১ প্যাকেট, খাকী খাম ২০০টি, ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরীর কাগজ ০১ রীম, ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরীর কাগজ ০১ বান্ডেল, বালতি ০১টি, ল্যাপটপ মাউস ০১টি, ল্যাপটপ চার্জার ০১টি, অন্যান্য ক্যাবল ১০টি, মাল্টিপ্লাগ ০১টি উদ্ধার করেন ।

আটক আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানায় র্যাব।

আপনার মতামত দিন....

এ বিষয়ের অন্যান্য খবর:


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।


CAPTCHA Image
Reload Image