Wednesday,29 Nov 2017
Ctgbarta24.com
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি থানায় একজন করে শিশুবান্ধব পুলিশ অফিসার নিযুক্ত আছেন।থানায় আগত শিশুদের (অপরাধী/ভিকটিম) দেখভাল সহ আইনী সহায়তা প্রদান মূলত তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের আওতাভূক্ত।শিশুরা যাতে কোন অবস্থাতেই থানায় অবস্থানকালীন সময়ে কোনরূপ বৈষম্যের শিকার না হয়, সে বিষয়টাও নিশ্চিত করতে হয়।সম্প্রতি আমার কর্মস্থল আকবরশাহ্ থানায় দু’জন শিশু মেহমানের আগমন ঘটে।একজন সাইফুল ইসলাম সাগর(১০), থানা-হাটহাজারী, জেলা-চট্টগ্রাম, অপর জন-মেহেদী হাসান(৭), থানা-সিদ্দিরগঞ্জ,জেলা-নারায়নগঞ্জ।
প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বর্তমানে তারা দু’জনই থানা কম্পাউন্ডে মহা সুখে দিনাতিপাত করতেছে। শীতের আগমনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের চলাফেরা ও বেশভূষায় বেশ পরিবর্তন ঘটে।শীতের গরম কাপড়, জামা জুতা, খাওয়া দাওয়া সবকিছু তাদের হাতের নাগালে।যেন চাহিবামাত্র আমার অফিসাররা দিতে বাধ্য আছেন।মেহেদী হাসানের মাতৃকুলের সন্ধান পাওয়া গেছে। অতি শীঘ্রই তাকে তাহার স্নেহময়ী মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল সাইফুল ইসলাম সাগর এর বেলায়।
আজ সকাল থেকে তার মন খুব খারাপ। মাঝেমধ্যে সবার অগোচরে অশ্রুপাতও হয়েছে বেশ কয়েকবার।চোখের জলে মনের ভাষা প্রকাশ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে তার কোমলমতি শিশুমন। আমার ব্যস্ততার একফাঁকে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায় এবং জানায়, কোনক্রমে সে থানা ছেড়ে কোথাও যাবে না। ইতোমধ্যে আমার অফিসারদের সাথে তার খুব সখ্যতা গড়ে উঠেছে। এই সখ্যতার বন্ধন সে কোনভাবেই ছিন্ন করতে চায় না। আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে আমার শিশু বান্ধব অফিসার তাকে সেফ হোমে পাঠাতে চায়। ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হয় শিশু সাইফুল। বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করলে সংসারে দুই সৎ ভাইয়ের আগমন হেতু তার ঠাঁই হয় পথে প্রান্তরে।পরবর্তীতে বাবা তৃতীয় সংসার করে সহধর্মিনীসহ নিরুদ্দেশ হলে তার সৎ মা মারধর করে বাড়ী থেকে বিতাড়ন করে।
মাতৃকূলের কেউ না থাকায় অসহায় সাইফুল ঘুরতে ঘুরতে চলে আসে আমার কর্মস্থলে। শিশু সাইফুলের আলোকিত ভবিষ্যতের পরিবর্তী গন্তব্য হয়তো ‘ আলোর ঠিকানা’ নয়তো অন্য কোথাও।
আলমগীর মাহামুদ
ওসি, আকবর শাহ থানা
চট্রগ্রাম।









