শের আলীর জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের সুপারিশ করছে সিএমপি

সিটিজিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকম

মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

শের আলীর জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের সুপারিশ করছে সিএমপি

সিটিজিবার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত শের আলীর ছবি।

চট্টগ্রাম: কক্সবাজার রামুর পানিরছড়ায় দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী বাসের নিচে থাকা পাঁচ বছরের একটি শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য আর্তনাদরত কান্নায় ভেঙ্গে পড়া পুলিশ কনস্টেবল শের আলীর জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের (পিপিএম) জন্য সুপারিশ করছেন সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার।

আজ মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সিএমপির কমিশনারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে শের আলীর জন্য পিপিএম’র সুপারিশ ‍পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

আগামীকাল বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপারিশের চিঠি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।

পুলিশ কনস্টেবল শের আলী চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটে কর্মরত আছেন। তার কনস্টেবল নম্বর ২৫৪৬।

সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার বলেন, শের আলীকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল দেয়ার জন্য সুপারিশ করছি। কাল (বুধবার) চিঠি পাঠাব। জানুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে যেন তাকে পিপিএম দেয়া হয় সেই অনুরোধ আমি করব।

গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য প্রতিবছর প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) দেয়া হয়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) পরিতোষ ঘোষ বলেন, শের আলী পুলিশ ডিপার্টমেন্টের মাথা উঁচু করেছেন। তিনি পুলিশ বাহিনীর গর্ব। মানবিকতাবোধ থেকে তিনি একটি শিশুকে বাঁচানোর জন্য যেভাবে ছুটে গেছেন তাতে আমরা গর্বিত। আমরা গোয়েন্দা ইউনিট থেকে তাকে পুরস্কৃত করার একটি প্রস্তাব কমিশনার স্যারকে দিয়েছি। স্যার তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন।

কনস্টেবল শের আলী তিনদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের পানিরছড়া গ্রামে গিয়েছিলেন।

গত রোববার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় শের আলীর বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় বাস উল্টে নিহত হন চারজন। একই দুর্ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ২৩ জন। ওই বাসের নিচে চাপা পড়ে একটি পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু।

তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রক্তাক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে আনেন স্থানীয় বাসিন্দা শের আলী। উদ্ধার করা মাত্রই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তাক্ত শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে সর্ব শক্তি দিয়ে দৌঁড়ানো শুরু করেন শের আলী!

দৌঁড়ানোর সাথে সাথে অপরিচিত এই শিশুটির জন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। তার কান্নায় শোকে স্তব্ধ গোটা পরিবেশ সবাই অবাক। শিশুটির কষ্ট ও যন্ত্রণা দেখেই অঝোরে কেঁদেছেন তিনি যেন আপন কেউ। ওই সময় শের আলীর কান্না দেখে উপস্থিত জনতাও চোখের পানি আটকাতে পারেননি। শের আলী আর হাজারো মানুষের দোয়া আর কান্না আল্লাহ কবুল করেছেন। শিশু উম্মে হাবিবা এখন আশংখামুক্ত।

শের আলীর চরিত্রই আসল চরিত্র। এটাই হচ্ছে মানবতা। মানবিকতা ও উত্তম চরিত্রের উদাহরণ। সমাজে এই মানুষ গুলি হারিয়ে যাচ্ছে। তাকে মুল্যায়ন না করলে হয়তো অকৃতজ্ঞই থেকে যাবো আমরা। আসুন আমরা বদলাই, তাহলে বদলাবে সমাজ, বদলে যাবে প্রিয় দেশ।

উল্লেখ্য যে, জনদরদী এই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল শের আলী বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি পুলিশে কর্মরত। নিজ বাড়ীতে ছুটি ভোগকালীন তিনি এই মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

আজ মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) শের আলী ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। মানবিক এই কাজের জন্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ সব সদস্য মিলে শের আলীকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।




One thought on “শের আলীর জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের সুপারিশ করছে সিএমপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *